আজ ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বৈ-সা-বি র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। র্যালীটি ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সংলগ্ন ক্রিসেন্ট লেকে বর্ষ বিদায় ও নববর্ষকে বরণের নিমিত্ত পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
বৈ-সা-বি’ র্যালীর নেতৃত্ব দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। র্যালীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ঢাকায় বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রায় ৪০০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
র্যালী পূর্ব এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক বৈচিত্র্যতা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমাদের জাতীয় সম্পদে পরিনত হয়েছে। পাহাড়ের প্রাণের বৈসাবি উৎসবের বহুমাত্রিকতা সমতলের মানুষকেও ভীষনভাবে অনুপ্রাণিত করে- সে হিসেবে আমরা সবাই এক ও অভিন্ন। মন্ত্রী আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ এ সংস্কৃতি দেশ পেরিয়ে বিদেশেও আমাদের অসাপ্রদায়িক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে বিশেষভাবে তুলে ধরছে।
অনুষ্ঠানে নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, বৈসাবি আয়োজনের মূল অর্থই হলো পুরাতন বছরের দু:খ-গ্লানি, বেদনা-বঞ্চনাকে প্রতিকিভাবে নদীতে বা ছড়ায় ফুল ভাসিয়ে বিদায় জানানো, সাথে সাথে নব উদ্যমে নতুনবর্ষকে বরণ করে নেয়া। ঢাকা প্রবাসী পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী হওয়ায় উৎসবে নানা কারণে এলাকায় যেতে পারে না তাদেরকে ঘিরে গত ৪ বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ র্যালীর আয়োজন করে আসছে।
উলেস্নখ্য, ১৯৮৫ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বৈ-সা-বি অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে। বর্ষবরণ ও বিদায় উৎসবকে ত্রিপুরা সম্প্রদায় ‘বৈসুক’, মারমা সম্প্রদায় ‘সাংগ্রাই’ এবং চাকমা সম্প্রদায় ‘বিজু’ নামে এ উৎসব পালন করে থাকেন। একত্রে ৩টি আদ্যাক্ষর নিয়ে বৈ-সা-বি বলে পাহাড়ে এই উৎসব পরিচিত। চৈত্রের শেষদিনের আগের দিনকে বলা হয় ফুল বিজু। এদিনে ফুল দিয়ে ঘরবাড়ি সাজানো হয়। দ্বিতীয় দিন চৈত্র সংক্রান্ত ‘বৈসাবি’ অথবা মূল বিজু। এদিনকে উৎসবের প্রধান দিন ধরে নেয় চাকমারা। ত্রিপুরা ও মারমারা এদিন পালন করলেও তাদের জন্য ১ বৈশাখ হচ্ছে গুরত্বপুর্ণ দিন। মূল বিজুর সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে ‘পাচন’ (অনেক রকমের শাক-সবজির, ফলমূলের সমন্বয়ে রান্না করা তরকারি)। এই পাচনে যে যত পদের সবজি মেশাতে পারবে তার গুরত্ব তত বেশি। এদিন নতুন কাপড় পরে বাড়ি বাড়ি বেড়ানো, পাজন খাওয়া পাহাড়ীদের আনন্দ উদযাপনের মূল আয়োজন। প্রচলিত আছে যে, বিজুর দিন কমপক্ষে পাঁচ বাড়িতে বেড়াতে হবে। এসব বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পাজন খেলে পরবর্তী ৩ মাস কেউ কোন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে না ।